Header Ads

Header ADS

ইবনে আরাবির জন্ম-রহস্য এবং আব্দুল কাদের জিলানি


সুদূর আন্দালুসিয়া থেকে বাগদাদে এসেছেন এক পৌঢ় ব্যক্তি। দীর্ঘ পথে যাত্রার ক্লান্তি তার চোখে-মুখে স্পষ্ট। তবুও আচরণে উদ্যমের কমতি নেই। তিনি রাস্তায় রাস্তায় বাগদাদের এক শায়খের ঠিকানা অনুসন্ধান করে এতদূর এসে পৌঁছেছেন। বাগদাদবাসীর কাছে সেই শায়খের ঘর আপন ঘরের মতোই আপন এবং স্বয়ং শায়খ তাদের নয়নের মনি। লোকজন আন্দালুসিয়ার সেই ভদ্রলোককে শায়খের বাড়িতে পৌঁছে দিলেন। এইবার যেনো তার পথ পূর্ণতা পেলো। তিনি সেখানে যেয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন কাঙ্খিত সাক্ষাতের জন্য। তার নাম আলি ইবনে মুহাম্মাদ। আন্দালুসিয়ায় সরকারী চাকুরী করেন, জাতিতে আরব।

আলি ইবনে মুহাম্মাদ ছিলেন নিঃসন্তান। আন্দালুসিয়ার শ্রেষ্ঠ ডাক্তারগণ তার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। কেনো তিনি নিঃসন্তান তা কোন ডাক্তার বলতে পারছিলো না। সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত ওষুধ যেন অকার্যকর হয়ে পড়েছে শুধু তার জন্য। ঠিক সেই সময় আলি ইবনে মুহাম্মাদের এক বন্ধু তাকে বাগদাদে আসার পরামর্শ দিলেন। বন্ধুটি শুনেছেন যে বাগদাদে নাকি একজন আল্লাহওয়ালা শায়খ আছেন, তিনি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে যুগের সবচেয়ে অগ্রগামী হয়েছেন। তার কাছে দোয়া নিলে হয়তো আলি ইবনে মুহাম্মাদ আল্লাহর রহমতে সন্তান লাভ করবেন। সন্তানের আকাঙ্খায় এমন কোন পথ ছিলো না যে পথে তিনি যান নি, এমন কোন জ্ঞানী ছিলো না, যার কাছে পরামর্শ নিতে যান নি। বন্ধুর কাছে এরকম মোক্ষম পরামর্শ পেয়ে তিনি আর দেরী করলেন না। সাথে সাথে রওনা দিলেন বাগদাদের পথে।

দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এতোদিনের অপেক্ষা অবশেষে সমাপ্ত হয়েছে। তিনি এখন সেই আরাধ্য ব্যক্তির বাড়িতে তারই সামনে বসে আছেন। লম্বা দাঁড়ি, আলখেল্লা পরিহিত নুরানি আরব, আল্লাহর বন্ধুর মতোই চোখের দ্যুতি, হৃদয় শীতল করে দেওয়া ব্যক্তিত্ব।

“আমি নিঃসন্তান, হে মহান শায়খ আব্দুল কাদির জিলানি” আলি ইবনে মুহাম্মাদ কাতর স্বরে বলতে থাকলেন, “আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যেন আমি একজন সন্তানের জনক হওয়ার মাধ্যমে তৃপ্তি লাভ করতে পারি। আপনার চেয়ে আল্লাহর নৈকট্য কে আর লাভ করেছে এই সময়ে।”
সেই ঐশী পুরুষ শায়খ আব্দুল কাদের জিলানি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বসে রইলেন, “তোমার জন্য কোন তৃপ্তির খবর নেই আমার কাছে” তিনি ব্যাখ্যা করে বললেন, “আমি তোমার ভাগ্যলিপিতে চোখ বুলিয়ে এলাম। তোমার জন্য কোন সন্তান বরাদ্দ নেই। তাই চেষ্টা করো না এমন কিছু অর্জনের, যা তোমার ভাগ্যে নেই।”

আলি ইবনে মুহাম্মাদ মুষড়ে পড়লেন। তার যে একজন সন্তানের বড় ইচ্ছা। তিনি নাছোড়বান্দা। “আপনি আমার জন্য দোয়া করুন শ্রদ্ধ্যেয় শায়খ” তিনি অনুরোধ করে বললেন, “আপনার দোয়ায় আল্লাহ চাইলে আমার ভাগ্যলিপি পরিবর্তন করে দেবেন।”

আব্দুল কাদির জিলানি কিছুক্ষণ বসে রইলেন। কী যে ভাবলেন। “আমার ভাগ্যলিপিতে আরও একজন পুত্র সন্তানের নাম দেখলাম।” তিনি বলতে থাকলেন, “আমি সেই সন্তানকে তোমার জন্য উৎসর্গ করলাম হে মুহাম্মাদ ইবনে আরাবি। তুমি আন্দালুসিয়ায় ফিরে যাও। তোমার একজন পুত্র সন্তান হবে। তার নাম রাখবে মহিউদ্দীন। তাকে উত্তমভাবে শিক্ষা দিও। সে সাধারণ কোন মানুষ হবে না। সে হবে আল্লাহর ওলী, সমস্ত শায়খদের শায়খ। দুনিয়াব্যাপী তার প্রসিদ্ধি ছড়িয়ে যেতে থাকবে যুগের পর যুগ ধরে।”

এরপর ১১৬৫ সালে জন্ম নেয় সেই ঐশী শিশু মহিউদ্দীন ইবনে আরাবি। শায়খুল আকবর মহিউদ্দীন ইবনে আরাবি যে বছর জন্মগ্রহণ করেন, ঠিক তার পরের বছর বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী মারা যান। 

তথ্যসূত্রঃ

লেখাঃ আবু নাহিয়ান

কোন মন্তব্য নেই

rusm থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.