Header Ads

Header ADS

মাওলানা রুমির মৌলভি রেজিমেন্ট এবং ১ম বিশ্বযুদ্ধ

মাওলানা জালাল-উদ্দীন রুমির মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীদের আধ্যাত্মিক জীবন পদ্ধতি এবং দর্শন মৌলভি তরিকা হিসেবে পরিচিতি পায়।  মূলত এর দ্বারা মাওলানা রুমির দর্শন এবং আদর্শকেই বুঝানো হতো। মৌলভি তরিকার অনুসারীগণ মরমী গান এবং সুফি ঘুর্ণন নৃত্য প্রদর্শনের জন্য সহজেই অন্যদের চেয়ে আলাদা তরিকা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। (সুফি ঘুর্ণন নৃত্যের উদ্ভব সম্পর্কে জানতে এই নিবন্ধটি পড়ুন) এর অন্তর্নিহিত শক্তি এবং শান্তিকামী দর্শনের জন্য উসমানী সাম্রাজ্যে তরিকাটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সাম্রাজ্যের মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এর অনুসারী ছিলেন।

দেখুনঃ গিনেজ বুক রেকর্ডে সুফি ঘূর্ণন নৃত্য

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে উসমানী সাম্রাজ্য অনাকাঙ্খিতভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল হতে যুদ্ধ করতে সক্ষম এমন নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মুজাহিদিন-ই-মৌলভিয়া নামে একটি বাহিনী গঠন করা হয়। এই বাহিনীতে প্রায় ৮০০ জন দরবেশ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাদের অধিকাংশই কোনিয়ায় বসবাস করতেন এবং যুদ্ধের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো না। এই বাহিনীকে নেতৃত্ব দিতো রাজকীয় চতুর্থ সেনাবাহিনী। একটি পরিপূর্ণ ব্যাটেলিয়ান হিসাবে দরবেশ যোদ্ধাদের সিরিয়ার দামেস্কে নিযুক্ত করা হয়।

যুদ্ধে উসমানী সাম্রাজ্যের পরাজয় ঘনিয়ে আসতে শুরু করে। অন্যান্য ব্যাটেলিয়নের মতো মুজাহিদিন-ই-মৌলভিয়াতেও আরো যোদ্ধা নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়। ১৯১৬ সালের আগস্ট মাসে আরো এক ব্যাটেলিয়ন যোদ্ধা নিয়োগ দিয়ে মিলিত শক্তির নাম দেওয়া হয় মৌলভি রেজিমেন্ট। ফিলিস্তিন অভিযানের শেষ হওয়া পর্যন্ত এই রেজিমেন্টকে সম্মুখ সমরে পাঠানো হয় নি। মৌলভি রেজিমেন্টে মূলত সবাই ছিলেন সুফি দরবেশ। তারা হত্যার চেয়ে ভালোবাসাকে বেশি পছন্দ করতেন। যুদ্ধের ময়দানে নৃশংসতার চেয়ে প্রেমকে অগ্রাধিকার দিতেন। উসমানী সাম্রাজ্যের যোদ্ধারা যখন সামরিক ও বেসামরিক আর্মেনিয়ানদের নির্বিচারে হত্যা করছিলো, তখন এই দরবেশ যোদ্ধারা সাম্রাজ্যের আনুগত্য ভঙ্গ করে ভালোবাসা ও ধর্মের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তারা গোপনে বেসামরিক আর্মেনিয়ানদের সহযোগিতা করতেন। যুদ্ধের ময়দানেও শত্রু পক্ষের যোদ্ধা ছাড়া সাধারণ নাগরিকের কোন ক্ষতি করতেন না। বরং উল্টো তারাই অসংখ্য নিরপরাধ ব্যক্তিদের নিশ্চিত হত্যার হাত থেকে রক্ষা করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতেন। তাদের সহযোগিতায় বেঁচে যায় হাজার হাজার নিরীহ আর্মেনিয়ান খ্রিস্টান। এভাবে মৌলভি রেজিমেন্টের সদস্যরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রক্তের সাগরে ধর্মের ফুল বিকশিত করে মানবতাকে রক্ষা করেন। তবুও তখন ১৫ লাখের বেশী আর্মেনিয়ানকে হত্যা করা হয়েছিলো।

এভাবে গর্বের সাথে মৌলভি রেজিমেন্টের দরবেশগণ সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে তাদের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজকীয় আদেশ জারী করার মাধ্যমে এই রেজিমেন্ট বিলুপ্ত করে দেয়া হয় !!!

যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেও দরবেশগণ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে মানুষ মানুষের জন্য। মানুষ যখন হাতে অস্ত্র তুলে নেয়, সেই অস্ত্র কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে তোলা হয় না, বরং তা করা হয় মানুষকে রক্ষার জন্য। বিশ্ব ইতিহাসে মৌলভি রেজিমেন্ট এই কারণেই প্রসিদ্ধ হয়ে আছে যে তারা কোন দেশের হয়ে যুদ্ধে জড়িয়েও দেশ-কাল-মতবাদের অনেক উপরে উঠে মানবতার রেজিমেন্টে পরিণত হয়েছিলেন। যুদ্ধের পরে সুফি তরিকা হিসেবেও মৌলভি তরিকা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। তাদের বাসভবন কেড়ে নেওয়া হয়। কোনিয়ায় তাদের মূল কেন্দ্রকে জাদুঘরে রুপান্তরিত করে দেওয়া হয়। বহুদিন পর্যন্ত সুফি ঘূর্ণন নৃত্য তুরস্কে নিষিদ্ধ ছিলো।

উসমানী সাম্রাজ্যের খলিফারা তাদের প্রাসাদে ঘুর্ণন নৃত্যের আয়োজন করতেন। বহু পাশা, উচ্চপদস্থ আমলা, শায়খুল ইসলামগণ এই তরিকার অনুসারী ছিলেন। মাওলানা রুমির দর্শন এবং আদর্শকেন্দ্রিক এই তরিকা কিভাবে গড়ে উঠে তা সমগ্র সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছিলো, তা জানতে দ্বিতীয় পর্ব পড়ুনঃ মৌলভি তরিকার উদ্ভব এবং ক্রমবিকাশ


লেখাঃ মোঃ মাহফিজুর রহমান


আরও দেখুনঃ

১) "মাঝে মাঝে মাওলানা রুমি আমার স্বপ্নে আসেন"

২) শেখ সাদির গল্প-২

কোন মন্তব্য নেই

rusm থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.