Header Ads

Header ADS

শেখ সাদির গল্প-২| খোরাসানের বাদশাহর অদ্ভুত এক স্বপ্ন


শেখ সাদির জন্মদেশ ইরান। ইরানের পূর্বদিকে পাহাড়ঘেরা অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ হলো খোরাসান তথা বর্তমানের আফগানিস্তান। আজকের এই গল্পটি খোরাসানের বাদশাহকে নিয়ে।

এর পূর্বের গল্পটি পড়ুন এখানেঃ শেখ সাদির গল্প-১| দয়ালু বাদশাহ ও একজন ফাঁসির আসামী

প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থ-বৈভব, প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতায় উচ্চ শিখরে থাকা একটা রাজ্য খোরাসান। যুদ্ধবিদ্যা এবং সাহসিকতার জন্য প্রসিদ্ধ দেশটি। এই দেশেরই কোন এক যুগের একজন বাদশাহ স্বপ্নে দেখলেন মহান সুলতান মেহমুদ কবরে শুয়ে আছেন। তার প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাম না জানা বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে ফেলেছে। মণিমুক্তা খচিত মূল্যবান পোশাক কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মাথায় নেই তার গর্বের রাজমুকুটও। যে মাথা কখনো কারো সামনে নত হয় নি, সেটিও অবশিষ্ট নেই। এমন কিছু অদ্ভুত পোকামাকড় তাকে খেয়ে ফেলেছে, তাদের কখনো দেখেন নি বাদশাহ। সুলতানের পরিচয় জানার মতো শুধু একটি অঙ্গ এখনো অক্ষত আছে। অপূর্ব সুন্দর তার চোখ দু'টি তখনো নষ্ট হয়ে যায় নি। সুলতান মেহমুদ সেই চোখ দিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছেন। এইটুকু দেখার পর বাদশাহর ঘুম ভেঙে গেলো।

ঘুম থেকে উঠে তিনি প্রচন্ড দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। এইরকম এক অদ্ভুত স্বপ্ন তিনি প্রথম দেখলেন। এর ব্যাখ্যা কী হতে পারে!  খোরাসানের সমস্ত জ্ঞানী-গুনীদের ডেকে পাঠালেন। তার মন্ত্রী-শাস্ত্রীরাও দরবারে উপস্থিত হলো। দূর-দুরান্ত থেকে হাজির হলো স্বপ্ন বিশারাদ্গণ। সবাই নিজের জ্ঞান এবং উপলব্ধি অনুযায়ী স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিলো। কিন্তু কোন ব্যাখ্যা বাদশাহর পছন্দ হলো না। সেই দরবারে একজন বৃদ্ধ দরবেশ চুপচাপ বসে ছিলেন। অবশেষে তিনি উঠে দাঁড়ালেন।

"এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কেবলমাত্র এটাই হতে পারে, হে সত্যান্বেষী বাদশাহ" দরবেশ বলতে শুরু করলেন,  "সুলতান মেহমুদ বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক ছিলেন। তিনি অনেক শ্রম দিয়েছেন, যুদ্ধ-বিগ্রহ করেছেন সাম্রাজ্যের জন্য। আজ তিনি কবরে শুয়ে শুয়ে নিঃস্ব অবস্থায় দেখছেন তার প্রিয় সাম্রাজ্য অন্যের হাতে শাসিত হচ্ছে।"

পৃথিবীতে এরকম বহু প্রতাপশালী মানুষ ছিলেন, কবরে যাওয়ার পর তাদের কোন চিহ্নও অবশিষ্ট নেই। সুলতান মেহমুদকে যখন কবরে রেখে আসা হলো, তার অজস্র ধনরাশির কিছুই সাথে গেলো না। কবর তাকে গ্রাস করে ফেললো। বহু প্রাচীনকালে নওশিরওয়া নামের একজন বাদশাহ ছিলেন। তার নাম এখনো মানুষের মুখে মুখে প্রশংসিত হয়। কারণ তিনি ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ শাসক। মূলতঃ কোন মানুষ অমরত্ব পায় তার কাজের মাধ্যমে। জীবদ্দশায় ভালো কাজ করলে পৃথিবী যুগ যুগ ধরে তাকে স্মরণ করে, শ্রদ্ধা করে। আর খারাপ কাজ করলে সে হয়ে যায় নিকৃষ্ট একজন। কবরের মাটির নিচেই চাপা পড়ে থাকে সে।

গল্পটুকু বলার পর শেখ সাদি উপদেশ দিয়ে বলেন, "হে মানুষ!  ভালো কাজ করো। নিজের আয়ুকে গনীমত (অর্থাৎ মূল্যবান) মনে করো, তুমি মারা গেছো এই সংবাদ প্রচারিত হওয়ার আগেই।"

শেখ সাদির এই গল্প থেকে শিক্ষা

১) ভালো কাজের মাধ্যমে মানুষের মনে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যায়।
২) যতই প্রতাপশালী ব্যক্তি হোক না কেন, কবর তাকে গ্রাস করবেই।
৩) ভালো স্বপ্নের মাধ্যমে অনেক উপকারী শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।

এরপরে পড়ুনঃ শেখ সাদির গল্প-৩। বেঁটে ও লম্বা রাজকুমার 

মূলঃ শেখ সাদি
উৎসঃ গুলিস্তা ১ম অধ্যায়
ভাবানুবাদ ও গল্প লিখনঃ মোস্তাফিজুর রহমান

কোন মন্তব্য নেই

rusm থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.