Header Ads

Header ADS

শাহ নেয়ামতুল্লাহর ক্বাসিদা ও ব্যাখ্যা (পর্ব-১)


শাহ নেয়ামতুল্লাহ সপ্তদশ শতকে গৌড় অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক হিসেবে পরিচিত। ফার্সি ভাষায় লেখা তার ক্বাসিদা বা বড় কবিতাটি ইতিহাসে অমরত্বলাভ করেছে নির্ভুল ভবিষ্যতবানী করার জন্য।  কবিতায় বলা প্রতিটি বানী হুবুহু মিলে যাচ্ছে। আমরা স্পিরিচুয়াল পোয়েট্রি হিসেবে ধারাবাহিকভাবে ক্বাসিদা নিয়ে আলোচনা করবো। 

ক্বাসিদাটির এই অনুবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত “কাসিদায়ে সাওগাত” বই থেকে নেওয়া।
  
শাহ নেয়ামতুল্লাহ বলছেন ভারতের অতীত কাহিনী  আলোচনা করতে চাচ্ছেন না, এই কবিতায় শুধু ভারতের ভবিষ্যৎ দিনের কিছু সংবাদ তিনি দিতে চাচ্ছেন। এটা তার অনুমান বা কল্পনা নয়, বরং বলেছেন সংবাদ। পরের লাইনে দ্বিতীয় দাওর বলতে বুঝানো হয়েছে ভারতে মুসলিম শাসনের দ্বিতীয় যুগকে। ১১৭৫ সালে মোহাম্মাদ ঘোরির মাধ্যমে ভারতে মুসলিম যুগের সূচনা ধরা হলে ১৫২৬ এই ধারার সমাপ্তি ঘটে বলা যায়। ১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধে সম্রাট বাবর ভারত দখল করেন। তার জন্ম মধ্য এশিয়াতে হলেও তার মাতৃভাষা ছিলো চাঘতাই, যা তুর্কি ভাষার একটি উপভাষা। তার সেনাবাহিনীতে ইরানি-তুর্কি সৈন্য বেশি ছিলো। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদেও ছিলো তুর্কিদের আধিপত্য। শাহ নিয়ামতুল্লাহ বলছেন এই তুর্কি শাসন হবে অন্যায়-অত্যাচারের। মোঘল সম্রাটগণের আমলে ভারত অনেক উন্নত ছিলো সত্য, তবে শাসকের বিরোধীতা করলেই নেমে আসতো অত্যাচার। তাদের কঠোর অত্যাচার, ভোগ-বিলাসের নানা ঘটনা আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই। তুর্কীদের মূল স্বভাব তারা হারিয়ে ফেলেছিলো।
এখানে বিদেশী দণ্ডধারী বলতে ইংরেজদের বুঝানো হয়েছে। তারা মোঘলদের হারিয়ে ভারতের ক্ষমতা লাভ করে। তারা প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে ব্যপক পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন শাসননীতি চাপিয়ে দেয়। তারা নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করে। এরপরে বলা হয়েছে, রাশিয়া-জাপানের মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হবে। ইতিহাস থেকে জানি যুদ্ধটি চলে ১৯০৪ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত। যদিও যুদ্ধের প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছিলো অনেক আগে থেকেই। একটা চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধটি শেষ হলেও তাদের অন্তরের যুদ্ধ তখনো শেষ হয়নি। এর প্রমাণ পাওয়া যায় পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে। এরপর শাহ নিয়ামতুল্লাহ বলেছেন, ঠিক ওই সময় ভারতে প্লেগ রোগ দেখা দেবে। এবং আসলেও তাই ঘটেছে। রাশিয়া-জাপান যুদ্ধের সময়  ১৮৯৮-১৯০৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ এবং প্রথম ৩০ বছরে প্রায় ১২৫ লাখ ভারতীয় মারা যায়। এর বড় একটা অংশ মুসলমান।
ভবিষ্যতবানীর এই অংশ অনুযায়ী যুদ্ধের পরে জাপানে ভূমিকম্প হবে এবং এক তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বাস্তবেও সেটাই হয়েছিলো। আমরা জানি ১৯২৩ সালের ভূমিকম্পে জাপানে ১৪২৮০০ জন মানুষ মারা যায়। দেশের বৃহত্তম শহরগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর ১৯২৫, ২৭, ৩০, ৩৩, ৩৬, ৪৪ সালে ঘটা বেশ কয়েকটি ভূমিকম্পে জাপান মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পশ্চিমের মহারণ বলতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, যা ১৯১৪-১৯১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরাধিকাল ধরে স্থায়ী ছিলো। জীম বলতে জার্মানি এবং আলিফ বলতে ইংল্যান্ড বুঝানো হয়েছে। এই যুদ্ধে জার্মানি পরজিত হয়। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হলো ব্রিটিশ সরকারের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ি এই যুদ্ধে আসলেই ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ মারা যায়। তবে অন্য উৎস অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা ২ কোটি কিংবা আরও বেশি। সঠিক সংখ্যা যেটাই হোক এই ভবিষ্যতবানী ভয়াবহ অবস্থার দিকেই ইঙ্গতি করছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে শেষে বিবাদমান দেশের মধ্যে একটা শান্তি চুক্তি হয়। এই চুক্তির ফলে লীগ অফ নেশন্স গঠিত হয় পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু সংগঠনটি তার লক্ষ্য পূরণে বারংবার ব্যর্থ হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে থাকে। পরের অংশটুকুও ইতিহাসের সাথে মিলে যায়। চীন জাপানের ভেতরে সমুদ্র-দ্বীপ ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ বাঁধতো। এখনো তাদের মধ্যে বৈরী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় মাঝেমধ্যে।

চলবে...


তথ্যসূত্রঃ কাসিদায়ে সাওগাত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত


লেখা ও ব্যাখ্যাঃ মিজানুর রহমান




কোন মন্তব্য নেই

rusm থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.