শাহ নেয়ামতুল্লাহর ক্বাসিদা ও ব্যাখ্যা (শেষ পর্ব)
শাহ নেয়ামতুল্লাহ সপ্তদশ শতকে গৌড় অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক হিসেবে পরিচিত। ফার্সি ভাষায় লেখা তার ক্বাসিদা বা বড় কবিতাটি ইতিহাসে অমরত্বলাভ করেছে নির্ভুল ভবিষ্যতবানী করার জন্য। কবিতায় বলা প্রতিটি বানী হুবুহু মিলে যাচ্ছে। আমরা স্পিরিচুয়াল পোয়েট্রি হিসেবে ধারাবাহিকভাবে ক্বাসিদা নিয়ে আলোচনা করছি। আজ পড়ুন এর তৃতীয় পর্বঃ
তৃতীয় পর্ব দেখুনঃ শাহ নেয়ামতুল্লাহর ক্বাসিদা ও ব্যাখ্যা (পর্ব-৩)
ভারতের অবস্থা বর্ণনা করার পর শাহ নেয়ামতুল্লাহ পশ্চিমাদেশের বিপর্যের কথা বলছেন। সেসব দেশেও মহা বিপর্যয় নেমে আসবে। এই বিপর্যয় ঘটবে ভারত ধ্বংস হওয়ার পরে অথবা সমসাময়িক যুগেই একটু আগে-পরে। তখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। এখানে আলিফ দ্বারা আসলে কোন দেশ বুঝানো হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে আলিফ দিয়ে শুরু পশ্চিমা দেশ যেমন ইংল্যান্ড, আমেরিকা ইত্যাদি বুঝানো হয়েছে তা তে সন্দেহ নেই। সেই দেশটি এমনভাবে ধ্ববংস হয়ে যাবে যে তার কোন চিহ্নও অবশিষ্ট থাকবে না। শুধুমাত্র মানুষের ইতিহাসে তাদের নাম লেখা থাকবে যে অমুক নামে একটা দেশ ছিলো, যা আজ আর নেই। তিল তিল করে তারা যতো অপরাধ করেছিলো, তার শাস্তি তো পেতেই হবে। কুদরতি হাতে তাদের শাস্তি দেয়া হবে। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো অলৌকিক ঘটনা বর্ণনার সময় নবীর ক্ষেত্রে মোজেযা এবং আউলিয়াদের ক্ষেত্রে কারামত শব্দ ব্যবহার করা হয়। এখানে কুদরতি হাত দ্বারা স্বয়ং আল্লাহর দিকে নির্দেশ করা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। মহান আল্লাহ তাদের ভূমিকম্প-খরা-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ দিয়ে তাদের ধ্বংস করে দেবেন। আমি এই ব্যাখ্যা পছন্দ করি কারণ হাদীসে এরকমই বলা হয়েছে পশ্চিম দিকে ভূমিকম্প এবং বিপর্যয় ঘটানোর বিষয়ে।
রহস্যভেদী এই কবিতাকে শাহ নেয়ামতুল্লাহ রত্নহার বলে উল্লেখ করছেন। গায়েবী সাহায্য পেতে এই কবিতা শিক্ষকের মতো সহায়তা করবে বলে তিনি বলে গেছেন। যদি আরো শীঘ্রই আল্লাহ সাহায্য চাই, তাহলে তার হুকুম-আহকাম মেনে চলতে উপদেশ দিচ্ছেন তিনি। কবিতার সর্বশেষ ভবিষ্যতবানী হিসেবে তিনি কানা জাহুকার কথা বলেছেন। কানা জাহুকার শব্দটা আল কুরআনের সূরা বনী ইসরাইলের ৮১ নং আয়াতের শেষ অংশ। এর অর্থ মিথ্যার বিনাশ অনিবার্য। কবিতায় কানা জাহুকার বলতে তিনি দাজ্জালের বিনাশ বুঝিয়েছেন। কারণ দাজ্জালের অপর নাম মিথ্যাবাদী। তার বিনাশ অনিবার্য। দাজ্জাল যে বছর পৃথিবীতে প্রকাশিত হবে, ঠিক সে বছরেই ইমাম মেহেদির আবির্ভাব ঘটবে। তিনি এসে দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবেন। এরপর আসবেন স্বয়ং ইসা আঃ, তবে নবী হিসেবে নয়, বরং উম্মাতে মোহাম্মদি হিসেবে তিনি আসবেন এবং আল কুরআনের মাধ্যমে প্রবর্তিত শরীয়ত তিনি মেনে চলবেন। এভাবে পৃথিবী থেকে সমস্ত অপশক্তির বিনাশ ঘটবে। পৃথিবী হয়ে উঠবে শান্তিময়।
শাহ নেয়ামতুল্লাহ এবার নিজেই নিজেকে থামিয়ে দিচ্ছেন, বলছেন, “চুপ হয়ে যাও”, আল্লাহর রহস্যগুলো রহস্য হিসেবেই থাকুক। এরদ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে তিনি আরও অনেক কিছু জানতেন। কিন্তু আর বলেন নি। শাহ নিয়ামতুল্লাহ ছিলেন আল্লাহর একজন ওলী। তাকে আল্লাহ ইলমে লাদুন্নির জ্ঞান্ম দান করেছিলেন বলেই এতো নির্ভুলভাবে ভভিষ্যতের সংবাদ আমাদের দিতে পেরেছেন এবং আরও সংবাদ তার কাছে ছিলো, যা তিনি গোপন করেছেন। মূলতঃ ওলীদের সামনে আল্লাহ অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আমাদের কাছে যা অদৃশ্য, তা তাদের কাছে দৃশ্য। পরের লাইনে বলা কুনুত কানয আসলে কবিতা লেখার সাল বলেছেন। কেউ কেউ মনে করেন এই কুনুত কানযের অর্থ বের করতে পারলে বাকি সংবাদগুলোও জানা যাবে। তিনি একটা সূত্র আমাদেরদিয়ে গেছেন, যা কাজে লাগিয়ে আরো কিছু জানা যেতে পারে। বাকিটা আল্লাহ জানেন।
ভবিষ্যতবানী কখনো মিথ্যাও হতে পারে। কারণ মানুষের দোয়ার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়।
তথ্যসূত্রঃ কাসিদায়ে সাওগাত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত
লেখা ও ব্যাখ্যাঃ মিজানুর রহমান
কোন মন্তব্য নেই