শাহ নেয়ামতুল্লাহর ক্বাসিদা ও ব্যাখ্যা (পর্ব-২)
শাহ নেয়ামতুল্লাহ সপ্তদশ শতকে গৌড় অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক হিসেবে পরিচিত। ফার্সি ভাষায় লেখা তার ক্বাসিদা বা বড় কবিতাটি ইতিহাসে অমরত্বলাভ করেছে নির্ভুল ভবিষ্যতবানী করার জন্য। কবিতায় বলা প্রতিটি বানী হুবুহু মিলে যাচ্ছে। আমরা স্পিরিচুয়াল পোয়েট্রি হিসেবে ধারাবাহিকভাবে ক্বাসিদা নিয়ে আলোচনা করবো। আজ পড়ুন এর দ্বিতীয় পর্বঃ
প্রথম পর্ব দেখুনঃ শাহ নেয়ামতুল্লাহর ক্বাসিদা ও ব্যাখ্যা (পর্ব-১)
ক্বাসিদাটির এই অনুবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত “কাসিদায়ে সাওগাত” বই থেকে নেওয়া।
এই ভবিষ্যৎ বানী একদম মিলে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ২১ বছর পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ১ম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয় ১৯৩৯ সালে ৩রা সেপ্টেম্বর। দুই যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময় প্রায় ২১ বছর। এই যুদ্ধে ভারতীয়রা ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়েছিলো। ব্রিটিশরা তাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে রাজী করায়। তাই ভারতীয়রা ব্রিটিশদের সাথে সহযোগী হিসেবে যুদ্ধ করেছিলো। যুদ্ধশেষে ভারতীয়দের কোনই লাভ হয়নি। ব্রিটিশরা তাদের কথা রাখে নি। আমরা জানি এই যুদ্ধে বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক বোম আবিস্কার করেন এবং আমেরিকা জাপানের দুইটা শহর এই বোমের মাধ্যমে একদম ধ্বংস করে ফেলে। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয়। মূল কবিতায় ব্যবহৃত শব্দটি হচ্ছে ‘আলোতে বকর’ যার শাব্দিক অর্থ বিদ্যুৎ অস্ত্র, অনুবাদক বিদ্যুৎ অস্ত্রের পরিবর্তে ‘আনবিক অস্ত্র শব্দ ব্যবহার করেছেন।
ইন্টারনেট, রেডিও, টেলিভিশনের মাধ্যমে হাজার মাইলের দুরত্ব এখন একদম কাছে চলে এসেছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এখানে বলা হয়েছে প্রাচ্য তথা পূর্বদিকের দেশে বসে প্রতীচী বা পশ্চিমা দেশের গান শুনবে। এটা দ্বারা মূলত পশ্চিমা সংস্কৃতির বিশ্বায়নের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। বিশ্ব বাস্তবতাও এমনটাই।
প্রথম আলিফ ইংল্যান্ড এবং দ্বিতীয় আলিফ আমেরিকা। আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড পরস্পরের বন্ধু রাষ্ট্র। এখানে বলা হচ্ছে তারা রাশিয়া-চীনের সাথে আতাত করবে, অর্থাৎ গোপন সম্পর্ক গড়ে তুলবে। মুখে মুখে শত্রুতা দেখালেও ধারণা করা হয় তাদের ভেতরে গোপন বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে। তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে মেকি শত্রুতাভাব দেখিয়ে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসলেই ৬ বছর স্থায়ী ছিলো। তৃতীয় আলিফ দ্বারা ইতালি এবং দ্বিতীয় জিম দ্বারা জাপান বুঝানো হতে পারে। এই ধরনের সংকেতের একেক রকম অর্থ করা যায়। আল্লাহ ভালো জানেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে চলে যায়। কী অদ্ভুত মিল তাইনা ! ব্রিটিশরা যাওয়ার আগে ভারতীয়দের ব্রিটিশ বানিয়েই রেখে গেছে। আমাদের পোশাক, সংস্কৃতি, চিন্তা-মননে এখনো ব্রিটিশরা রয়ে গেছে। তারা আরো রেখে গেছে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ। এই দ্বন্দে ভারতবর্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। এ থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই। ভারতবাসীর মনে এখনো হিংসার আগুন জ্বলছেই। আর কাশ্মির সমস্যা তো আছেই। সবমিলিয়ে বলা যায় কবিতার এই অংশটুকুও হবুহু মিলে গেছে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের মাধ্যমে দুই টুকরো হয় ভারতবর্ষ। নেতাদের শঠতার জন্য ভারতীয়দের জীবনে নেমে আসে দুর্দশা। কোটি কোটি মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেয়ে ছন্নছাড়া জীবন কাটাতে থাকে। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধে। এরজন্য মূলত নেতারাই দায়ী ছিলো। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয় নিজের দেশেই। দেশের প্রধান শুধু নামেমাত্র প্রধান হয়ে থাকেন। সেনাবাহিনী এসে বারবার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। এই সকল ইতিহাস আমাদের সকলের জানা। অযোগ্য শাসকের কুপ্রভাব সম্পরকে সকলেই অবগত। দুর্নীতি-হত্যায় ভরে যায় দেশ। ১৯৭১ এ সেই দেশটাও ভেঙে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা সকলের জানা। বাংলাদেশ পর পর ৩ বার সারা পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দুর্নীতিবাজ দেশের স্বীকৃতি পায়। পাকিস্তান-ভারতেও ব্যাপক মাত্রার দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা দেখলে এর ব্যাখ্যা করার কোন প্রয়োজন নেই যে
এখানকার মুসলমানরা কতটা নিকৃষ্ট কাজ করে থাকে। এমন কোন পাপ নেই যার সাথে এদেশের মুসলমানরা
জড়িত নয়। বাংলাদেশ-পাকিস্তান মুসলিমদেশ হলেও এসব দেশের মেয়েদের লাজ-লজ্জা দিন দিন উঠে যাচ্ছে,
বাড়ছে ধর্ষনের হার। সম্মানী লোককে অসম্মানিত করা হচ্ছে।
কবিতার এই অংশের ব্যাখ্যা বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখলেই সত্যতা প্রমাণিত হয়।
তথ্যসূত্রঃ কাসিদায়ে সাওগাত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত
লেখা ও ব্যাখ্যাঃ মিজানুর রহমান
কোন মন্তব্য নেই