Header Ads

Header ADS

শেখ সাদির গল্প-১| দয়ালু বাদশাহ ও একজন ফাঁসির আসামী

শেখ সাদির গল্প, সাহিত্য, সুফিবাদ, মারেফত, শেখ সাদির ১৫২ গল্প, গুলিস্তাঁ, বোস্তা, সুফিবাদের গল্প, মারেফতের গল্প, ইসলামের গল্প
এক দেশে একজন ভালো বাদশাহ ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রচন্ড ন্যায়পরায়ণ এবং দয়ালু একজন শাসক। তিনি নিজে কখনো অত্যাচার করতেন না এবং রাজ্যে কাউকে অত্যাচার করতেও দিতেন না। নির্যাতিত মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ভালোবাসার পাত্র। একদিন বাদশাহ তাঁর রাজদরবারে বিচারকার্য পরিচালনা করছিলেন। বিচারে এক বন্দীকে হত্যার আদেশ দিলেন। সিপাহীরা আসামীকে ধরে ফাঁসি দিতে নিয়ে যাচ্ছিলো। এই সময় আসামী লোকটি তাঁর মাতৃভাষায় বাদশাহর উদ্দেশ্যে গালিগালাজ শুরু করে। তার মুখে যা আসছিলো, সেটা বলেই গালি দিতে থাকে। কারণ জ্ঞানী লোকেরা বলেন, যে ব্যক্তি জীবন থেকে তার হাত ধুয়ে নেয় (অর্থাৎ হতাশ হয়ে যায়), সে যা মনে আসে তাই বলে ফেলে। সামনে নিশ্চিত মৃত্যু জানলে হাত দিয়ে হলেও তলোয়ারের ধারালো প্রান্ত আটকানোর চেষ্টা করে। চারিদিকে শত্রুবেষ্টিত এবং পরাজিত হওয়ার কারণে তার ভেতর থেকে সমস্ত ভয়-ভীতি পালিয়ে যায়। মানুষ যখন নিরাশ হয়ে যায়, তখন তার গলা লম্বা হয়ে যায়, অর্থাৎ তার ভাষায় শালীনতা এবং ধৈর্য্য থাকে না। যেমনভাবে নিরুপায় বিড়াল প্রাণের মায়া ত্যাগ করে কুকুরের ওপর আক্রমণ করে, তেমনভাবে বন্দী লোকটি বাদশাহকে মুখের ভাষায় আক্রমণ করতে লাগলো। বাদশাহ তার ভাষা কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। কারন তাঁর ও আসামী লোকটির মাতৃভাষা ছিলো আলাদা।

এই লোকটি এভাবে কী বলছে? সে চিৎকার করছে কেনো? তার কথা শুনে মনে হচ্ছে সে খুব রেগে আছে।” বাদশাহ তার এক মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বললেন, “তুমি আমাকে অনুবাদ করে শোনাও তার কথাগুলো। তার প্রাণের আর্তনাদ আমি শুনতে চাই।

সেই মন্ত্রী ছিলেন প্রচন্ড জ্ঞানী এবং সৎ মানুষ। বাদশাহ থাকে সবসময় ভরসা করতেন। “হে মহাসম্মানিত বাদশাহ,” মন্ত্রী উত্তর দিলেন, “আসামী লোকটি পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত তিলাওয়াত করছে।”

বাদশাহ বললেন, “আমাকে বলো সে এমন কোন আয়াত তিলাওয়াত করছে যার জন্য তাকে এতো হিংস্র হতে হলো।”

এটা সেই আয়াত যেখানে আল্লাহ মুত্তাকিদের পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ‘তারা রাগ দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। আল্লাহ দয়াশীলদের ভালোবাসেন।’”

এই আয়াত শুনেই বাদশাহ নিশ্চুপ হয়ে বসে পড়লেন। তার অন্তরে করুণার জন্ম হলো। তিনি সাথে সাথে লোকটিকে মাফ করে দিলেন।

সেই সভায় আরো একজন মন্ত্রী হঠাৎ বলে উঠলেন, “হে বাদশাহ, আমরা যারা আপনার সেবক তাদের উচিত নয় আপনাকে মিথ্যা বলা। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি আগের মন্ত্রী আপনাকে মিথ্যা বলেছেন। আসামী লোকটি কুরআনের কোন আয়াত তিলাওয়াত করেন নি। বরং সে আপনাকে অশালীন ভাষায় গালি দিয়েছে, যা আমি মুখে নিতেও পারবো না।”

বাদশাহ কথাটি শুনে প্রচন্ড রেগে গেলেন। তার মুখ আগুনের মতো লাল ও ভয়ংকর হয়ে উঠলো।
তিনি বললেন, “সে আমাকে মিথ্যা বলেছে,” বাদশাহ বলতে থাকলেন, “শুনে রাখো, তার মিথ্যা কথা তোমার সত্যের চেয়েও সুন্দর। তার মিথ্যার ভিত্তি ছিলো কল্যাণকর বিষয়ের ওপর এবং তোমার সত্যের ভিত্তি অসৎ উদ্দেশ্যের ওপর।”

জ্ঞানীরা বলেন “কল্যাণকর মিথ্যা অকল্যাণকর সত্য অপেক্ষা উত্তম।" যে ব্যক্তি এমন যে তার উপদেশ বাদশাহ মেনে চলেন, তার উচিত ভেবেচিন্তে কথা বলা। কারণ তার কথার মাধ্যমে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। পারস্যের বাদশাহ ফরীদূনের প্রাসাদের তোরণে একটা কবিতা খোদাই করে লিখা ছিলো।
কবিতাটা এরকম,
“হে ভাই! পৃথিবী কারো সাথে থাকবে না। অতএব অন্তরকে আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ করো এবং তা যথেষ্ট মনে করো।”
দুনিয়ার বাদশাহীর উপর ভরসা করো না। এই দুনিয়া তোমার মতো বহু লোককে প্রতিপালন করেছে এবং সময় হলে হত্যা করেছে। যখন প্রাণ চলে যাওয়ার ইচ্ছা করবে, সে চলেই যাবে। তখন প্রাসাদের উপর মৃত্যু এবং মাটির উপর মৃত্যুর মধ্যে কোন বিভেদ থাকবে না।

এরপরে পড়ুনঃ শেখ সাদির গল্প-২। খোরাসানের বাদশাহর অদ্ভুত স্বপ্ন

শেখ সাদির এই গল্প থেকে শিক্ষা

১) চোখে দেখা সত্য সবসময় সত্য হয় না। ঘটনার ভেতরেও ঘটনা থাকে। আসামী লোকটি উপায়ান্তর না পেয়ে গালিগালাজ করেছে সত্য, কিন্তু এরদ্বারা সে প্রকৃতপক্ষে বাদশাহর কাছ থেকে ক্ষমা ভিক্ষা চাচ্ছিলেন। জ্ঞানী মন্ত্রী কুরআনের আয়াত বলে সেই সত্য উন্মোচন করে দিয়েছেন।
২) ক্ষমা মহৎ গুণ। একমাত্র ক্ষমার মাধ্যমেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। হত্যা সমাধান নয়, সমাধান আছে সংশোধনে।
৩) দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উচিত বুঝে-শুনে কথা বলা। কারণ তার কথার উপর অনেকের জীবন পর্যন্ত জড়িয়ে থাকতে পারে।
  
মূল কাহিনীঃ শেখ সাদি
উৎসঃ গুলিস্তাঁ ১ম অধ্যায়
ভাবানুবাদ ও গল্প লিখনঃ মাহফিজুর রহমান

কোন মন্তব্য নেই

rusm থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.